ব্যাকটেরিয়া :
ব্যাকটেরিয়া হল এক প্রকারের অতিক্ষুদ্র এবং সরল এককোষী জীব। ১৬৬৫ সালে অ্যান্টনি ফল লিভেনহিক অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে সর্বপ্রথম ব্যাকটেরিয়ার অস্তিত্ব প্রমাণ করেন। তিনি একজন লেন্স ও অণুবীক্ষণ যন্ত্র প্রস্তুতকারক। ১৮২৮ সালে ইরহেনবার্গ ব্যাকটেরিয়া শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন। বর্তমান সময়ে ব্যাকটেরিয়াকে প্রোটিস্টা নামের অন্য একটি জগতের অন্তর্গত জীব বলে ধরা হয়।
 |
চিত্র: ব্যাকটেরিয়া |
ব্যাকটেরিয়ার বৈশিষ্ট্য:
- জীব জগতের অন্তর্ভুক্ত কোষীয় জীব দের মধ্যে ব্যাকটেরিয়া সবচেয়ে ছোট ও সরলতম জীব।
- কোষপ্রাচীর যুক্ত কোষ ব্যাকটেরিয়া তে দেখা যায়।
- ব্যাকটেরিয়ার কোষ প্রোক্যারিওটিক এবং আদি নিউক্লিয়াস অথবা প্রোক্যারিওটিক নিউক্লিয়াস যুক্ত। একটিমাত্র প্যাচানোর ডিএনএ থাকে যাকে বলে 'ব্যাকটেরিয়াল ক্রোমোজোম' ।
- অধিকাংশ ব্যাকটেরিয়া কোষে ক্লোরোফিল থাকে না বলে এদের পুষ্টি পরভোজীয়। তবে ক্রমাটিয়াম, ক্লোরোবিয়াম ইত্যাদি ব্যাকটেরিয়ার দেহে ক্লোরোফিল থাকে বলে এরা সালোকসংশ্লেষ করতে সক্ষম।
- অ্যামাটোসিস দ্বারা অঙ্গজ-জনন পদ্ধতিতে এরা জনন কার্য করে। ব্যাকটেরিয়াম মাইটোসিস হয় না।
ব্যাকটেরিয়ার আকৃতি:
- গোলাকার অথবা কম্পাস :- (১) মনোকক্কাস বা মাইক্রোকক্কাস - উদা: মাইক্রোকক্কাস ফ্ল্যাভাস।(২) ডিপ্লোকাক্কাস - দুটো গোলাকার ব্যাকটেরিয়ার সহাবস্থান। উদা: ডিপ্লোকাক্কাস নিউমোনি। (৩) স্ট্যাফাইলোকক্কাস - দলবদ্ধভাবে আঙ্গুর থাকার মত একসঙ্গে থাকে। যেমন - স্ট্রেপটোকক্কাস পায়েজেনস। (৪) সারসিনি - ব্যাকটেরিয়া ঘনকের মত দেখতে। উদা: সারসিনি ম্যাক্সিমা।
- দন্ডাকার :- এই ধরনের ব্যাকটেরিয়া দেখতে দন্ডের মত। যেমন সালমোনেল্লা টাইফি।
- ভিব্রিও অথবা কমাকৃতি :- যেমন ভিব্রিও কলেরী, ভিব্রিও কমা।
- স্পাইরিলাম অথবা পেঁচালো :- যেমন মাইক্রোস্পাইরা।
ব্যাকটেরিয়া সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
- ব্যাকটেরিয়া শব্দের অর্থ ক্ষুদ্র কাঠি অথবা ক্ষুদ্র দন্ড।
- ডায়ালিস্টার নিয়ামোসিন্টেস হল ক্ষুদ্রতম ব্যাকটেরিয়া।
- ব্যাসিলাস বুটসচিল্লি হল বৃহত্তম ব্যাকটেরিয়া।
- কোষ প্রাচীর থাকা এবং অঙ্গজ জননের কারণে ব্যাকটেরিয়াকে উদ্ভিদ রূপে ধরা যায়।
- পূর্ণ মৃতজীবী ব্যাকটেরিয়া -ক্লসটিডিয়াম।
- আংশিক মৃতজীবী -ভিব্রিও কলেরী।
- আংশিক পরজীবী -স্ট্যাফাইলোকক্কাস।
উপকারী ব্যাকটেরিয়া সমূহ:
- ল্যাকটোব্যাসিলাস ট্রাইকোডেস - আবাত শ্বসন পদ্ধতিতে ল্যাকটিক এসিড উৎপন্ন করে। দুধ থেকে পনির, মাখন, দই প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয়।
- রাইজোবিয়াম, ক্লসটিডিয়াম, অ্যাজোটোব্যাকটর প্রভৃতি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা মাটিতে নাইট্রোজেন এর মাত্রা বাড়ে।
- মানুষের অন্ত্রে বসবাসকারী ঈশ্চেরিয়া কোলাই অথবা ই. কোলাই ভিটামিন B12 সংশ্লেষ করে।
- ক্লসটিডিয়াম ব্যাকটেরিয়া শন, পাট ইত্যাদি পচিয়ে উদ্ভিদের পেকটিন নষ্ট করে তন্ত নিষ্কাশনে সাহায্য করে।
- ট্রাইকোডারমা কোনিগী ব্যাকটেরিয়া তৃণভোজী প্রাণীদের সেলুলোজ পরিপাকে সহায়তা করে।
- ব্যাসিলাস সাবটিলিস বয়ন এবং কাগজ শিল্পে কাজে লাগে। এর দ্বারা ব্যাসিট্রাসিন ঔষধ তৈরি হয়।
ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট মানবদেহের কিছু রোগের সারণী:
ব্যাকটেরিয়া আক্রান্ত মানবদেহের রোগ |
ব্যাকটেরিয়ার নাম |
আমাশয় |
Bacilus dysentrae or Shigella dysentrae |
ডিপথেরিয়া |
Corynebacterium diptheriae |
ডায়রিয়া বা উদরাময় |
Bacillus Coli |
কলেরা |
Vibrio cholerae |
অ্যানথ্রাস |
Bacillus anthracis |
নিউমোনিয়া |
Dipliococcus pneumoniae |
যক্ষা |
Mycobacterium tuberculosis |
টাইফয়েড জ্বর |
Salmonella typhi or Salmonella typhoza |
বাতজ্বর |
Streptococcus ssp |
সিফিলিস |
Treponema pallidum |
জন্ডিস |
Leptospira cetro-haemorrhagiae |
প্লেগ |
Pasteurella pestis |
টিটেনাস |
Clostridium tectani |
কুষ্ঠ বা লেপ্রোসি |
Mycobacterium leprae |
গনোরিয়া |
Neisseria gonorrhoea |
খাদ্য বিষাক্ত কারণ বা বটুলিয়াম |
Clostridium botulinum |
আন্তরিক জ্বর |
Salmonella typhinurium |
হুপিং কাশি |
Bordetella pertusis |
গ্যাস গ্যাংগ্রিন বা দূষিত ক্ষত |
Clostridium septicum |
মেনিনজাইটিস |
Neisseria meningities |
ফোড়া |
Staphylococcus aureus |
গলবিল ও চামড়া ক্ষত |
Streptococcus pyogens |